Description
বর্তমান সময়ের অন্যতম দ্বীনি ও ইলমী ব্যক্তিত্ব প্রফেসর হযরত মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান সাহেব দামাত বারাকাতুহুম। হযরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুযুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হারদুই হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক সাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহির একজন বিশিষ্ট খলীফা। শৈশব থেকেই পিতা-মাতার অনুপম আদর্শে খুব সহনশীল এবং পরোপকারী অন্তঃকরণ নিয়ে বেড়ে উঠেছেন। মক্তব থেকেই দ্বীনি অনুভূতির সূচনা। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন। পরবর্তীতে আল্লাহওয়ালাদের সোহবত, দুনিয়া বিমুখতা এবং উলামায়ে কেরামের প্রতি অগাধ ভক্তি ও শ্রদ্ধা তাকে একজন আদর্শ ও অনুসরণীয় ইসলামী ব্যক্তিত্বে পরিণত করে। সুন্নাতের পৌনঃপুনিক অনুকরণ ও অনুসরণে তার মধ্যে সাহাবায়ে কেরামের চরিত্রের বাস্তব প্রতিফলন পাওয়া যায়। তার সান্নিধ্যে সবাই এক অনুপমেয় মিষ্টতা ও শান্তি অনুভব করেন। এ কিতাবে তারই জীবনের কিছু স্মরণীয় ঘটনা এবং কয়েকটি বয়ান সংকলন করা হয়েছে। আশা করি, এ কিতাব পাঠককে আপ্লুত করবে, বিস্মিত করবে এবং দ্বীনের পথে আরও অগ্রসর হতে সহায়তা করবে ইনশাআল্লাহ। উল্লেখ্য, বইটি হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক সাহেব দামাত বারাকাতুহুম সম্পাদনা করে দিয়েছেন।
[ekjon alokito manush, ekjon alokito manus]
admin –
Jubaer Hasan Juwel
29 April 2018
বই-পর্যালোচনা:
সুন্দর প্রচ্ছদ, চমৎকার পৃষ্ঠাসজ্জা, সাদামাটা শব্দচয়নে একজন আলোকিত আল্লাহওয়ালা মানুষের জীবন থেকে নেয়া ঘটনাসমূহের সম্ভার। বইটিকে বাস্তবে প্রকাশ করার সুযোগ করে দিয়েছেন শায়খ আব্দুল মালেক, তত্ত্বাবধায়ক মাসিক আল-কাউসার। তিনি বইটির অনেক জায়গায় সম্পাদনাও করেছেন। বইটিকে চারটি ধাপে ভাগ করা হয়েছে।
প্রথম ধাপ (১৯৩৮ – ১৯৫৭) : এ ধাপে সর্বোমোট ১৫টি ভাগ আছে। প্রফেসর হযরতের পরিবার , তাঁর মক্তবের উস্তাদ, আরবী শেখা, কলেজ জীবনের কিছু স্মরণীয় ঘটনা এখানে আলোচিত হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপ (১৯৫৮ – ১৯৭০) : এখানে সর্বোমোট ১১টি শিরোনামে ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এতে আছে উচ্চশিক্ষায় পড়াশোনা শুরু থেকে বুয়েটের শিক্ষকতা আরম্ভ করার সময় পর্যন্ত কিছু ঘটনা। এ অধ্যায়টি তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। দাড়ি রাখা, বিয়ে করা, চাকুরি, ওলামায়ে কেরামের সাথে তাআল্লুক এ সময়টাতেই ঘটেছে।
তৃতীয় ধাপ (১৯৭১-১৯৯০): এখানে ‘মুক্তিযু্দ্ধ এবং কিছু স্মৃতি’ থেকে নিয়ে ‘হযরত মাওলানা আবরারুল হক রহ. এর ইজাজত’ পর্যন্ত মোট ২৩টি ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তাবলীগে তিন চিল্লাহ এর সফর, হাফেজ্জি হুজুর (রহ.) এবং মাওলানা আবরারুল হক (রহ.) এর সংস্পর্শ এবং উভয়ের কাছ থেকে খিলাফত প্রাপ্তির ঘটনাসমূহ।
চতুর্থ ধাপ:
প্রফেসর হযরতের তিনটি বয়ানের সংকলন, যথাক্রমে:
১) আধুনিক জীবন এবং আমাদের দ্বীনি অনুভূতি
২) আখিরাতের জন্য খরচ
৩) শরীয়তের দৃষ্টিতে পার্টনারশিপ ব্যবসায় করণীয়
আলহামদুলিল্লাহ এ চারটা ধাপেই বইটি সমাপ্ত হয়েছে।
পাঠ-প্রতিক্রিয়া:
বুযুর্গদের জীবনী পড়লে নিজেকে অতি-তুচ্ছ মনে হয়। পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়ি আর মনে হয় মানুষ কিভাবে এতটা অসাধারণ হতে পারে। আল্লাহওয়ালা বুযুর্গদের জীবনী পড়ে বুযুর্গ হওয়ার সাহস খুব কম মানুষেরই হয়। একজন সাধারণ মানুষ। যিনি আলেম না। চায়ের দোকানে চা খান। হোটেলে নাস্তা করেন। বুয়েটের মত ভার্সিটির এসিট্যান্ট প্রফেসর। যিনি নিজে থেকেই বলেন আমি আলেম না, তবে ওলামায়ে কেরামের জুতা বহন করাকেই সৌভাগ্য মনে করি। তিনিও বুযুর্গ। হাজারো ওলামায়ে কেরামের পীর, শায়খ। কিভাবে সম্ভব।
এবার একটু পেছনে ফিরে যাই। সময়টা খুব সম্ভবত ২০০৯ সাল। সেদিন মাসের প্রথম সপ্তাহের প্রথম বুধবার। মারকাযুদ দাওয়াহ্ আল ইসলামিয়াতে দাওয়াত পেলাম ছোট একটি মাহফিলে শরীক হওয়ার জন্য। একজন আলেম আসলেন, অল্প পরিসরে কিছু কথা বললেন। বয়ানে একজন প্রফেসর সাহেবের খুব প্রশংসা করলেন। তার বয়ানের একটু পরে আসলেন একজন বৃদ্ধ-বুযুর্গ ব্যক্তি। তিনি বয়ান করলেন। তাঁর বয়ানের একটা অংশ এখনও কানে বাজে ‘আমি হাফেজ্জি হুজুরের সাথে হজে গিয়েছিলাম। আমি হুজুরের খাদেম ছিলাম। একদিন তাহাজ্জুদের সময় হাফেজ্জি হুযুর ঘুম থেকে উঠে লাঠি খুঁজলেন। লাঠি না পেয়ে আমাকে বললেন, আপনিই আমার জিন্দা লাঠি’। বুযুর্গ সাদামাটা কথা বলে বয়ান শেষ করলেন। বয়ানের শেষের দিকে জেনেছিলাম উক্ত বুযুর্গ হচ্ছেন প্রফেসর মুহাম্মদ হামীদুর রহমান সাহেব এবং প্রথম যে আলেম বয়ান করেছিলেন তিনি ছিলেন মুফতি আব্দুল মালেক সাহেব। যে চেয়ারে বসে মুফতী আব্দুল মালেক সাহেব মারকাযুদ দাওয়াহ এর ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বয়ান করেছেন, সেই চেয়ারে বসেই প্রফেসর হযরত মারকাযের ছাত্রদের বয়ান করেছেন। একজন সাধারণ ইংরেজি শিক্ষিত মানুষ, তারপরও তাঁর এত বড় গ্রহণযোগ্যতা এবং সৌভাগ্য কিভাবে হলো। বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে সেটা হলো তাঁর বিনয়-তাকাওয়া-আল্লাহওয়ালাদের সোহবত-দুনিয়া বিমুখতা- ইলম এবং আমলের সমন্বয়- ইলমের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা- সর্বোপরি ওলামায়ে কেরামকে গভীরভাবে ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা করা ইত্যাদি।
একজন আলোকিত মানুষ বইটি পড়ে তাঁর জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে জেনে আলোড়িত হই নি। এরকম অনেক বাস্তবতা সম্পন্ন লোক আমাদের আশেপাশেই ঘুরছেন। তবে আলোড়িত হয়েছি, তার বিনয়ের কারণে। এ বইটিতে শব্দের ঝঙ্কার নেই, তবে জীবনবোধের গভীরতা আছে। বইটিতে আবেগের মাত্রা নেই, কিন্তু সচিত্র জীবনদর্শন আছে। এটি অমূল্য কোন গ্রন্থ নয়। তবে সাধারণ শিক্ষিত মানুষের জন্য পরশ পাথর। একজন মানুষ সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও আল্লাহওয়ালা হতে পারেন। মানুষের জন্য আদর্শ হতে পারেন। প্রফেসর হযরত এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই আলোকিত মানুষের জীবনীগ্রন্থ পড়তে আমি সবাইকে দাওয়াত দিয়েই সমাপ্ত করছি। পাঠক তবে শুরু হোক আপনার যাত্রা, একজন আলোকিত মানুষ হওয়ার পথে।